বরিশাল:
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম ভাট্টির নেতৃত্বে এক শালিস বৈঠকে ধর্ষিত স্কুলছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকা স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে জমা রাখা হয়। এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ওই ঘটনায় থানার ওসিকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সময় ক্ষেপনের অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
গত ৫ জুলাই উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামের দরিদ্র পরিবারের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে একই গ্রামের আমীর মন্ডলের ছেলে দুলাল মন্ডল। এ সময় স্থানীয়রা ধর্ষককে হাতেনাতে আটক করলেও ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষককে ছাড়িয়ে নেয় গ্রাম্য প্রভাবশালীরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ১০ জুলাই তাদের বিয়ের কথা থাকলেও টালবাহানা শুরু করে ধর্ষক ও তার পরিবার।
এ ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করার অভিযোগ ওঠে থানার ওসি বিরুদ্ধে। নিরুপায় হয়ে ধর্ষিতার বাবা গত বুধবার বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল আগৈলঝাড়া থানার ওসিকে এ অভিযোগে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের আদেশের কপি থানায় পৌঁছলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করেনি পুলিশ।
তবে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি গতকাল ওই আদেশ পেয়েছেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে ধর্ষকের পক্ষাবলম্বন করে গত শনিবার বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ভাট্টির নেতৃত্বে নাগিরপাড় কালী মন্দিরে এক শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এআর ফারুক বখতিয়ার, ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি কাসেম বখতিয়ার, নাঘিরপাড় স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বখতিয়ার, ইউপি সদস্য কালাম হাওলাদার, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেনুকা অধিকারী, সাবেক ইউপি সদস্য কুমোদ রায়, ধর্ষক দুলাল ও তার বাবা আমীর এবং ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী ও তার বাবা ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই চেয়ারম্যান ভাট্টি ধর্ষিতার বাবা ও ধর্ষিতাকে হুমকি দিয়ে তিনশ’ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করে ধর্ষককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। ধর্ষকের বাবা জরিমানা কমানোর আবেদন করলে ২০ হাজার টাকা কমিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পুননির্ধারন করা হয়। ওই সময় নগদ ৩০ হাজার টাকা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক বখতিয়ারের কাছে জমা দেওয়া হয়। বাকী এক লাখ টাকা আগামী শুক্রবারের মধ্যে শালিসদারদের মাধ্যমে ধর্ষিতার পরিবারকে পরিশোধের কথা রয়েছে।
বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি জানান, পুলিশের সাথে কথা বলে এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি ওই ঘটনার শালিস করে দিয়েছেন। তবে ওসি মনিরুল ইসলাম এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
– See more at: http://www.bd-pratidin.com/country/2016/07/19/157830#sthash.iN0IE5At.dpuf
পাঠকের মতামত